বাংলা এবং বাঙালি

যারা বাংলাভাষী তারাই বাঙালি। এই বিষয়ে কারোরই দ্বিমত আছে বলে বোধ হয় না। তাহলে আমরা যদি বাংলার উৎসসন্ধান করতে পারি তবে বাঙালি জাত নিয়ে অনেক বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়।
বাঙালদেশের অদূরে এক হিন্দু,দার্শনিক, মহাপুরুষ সিদ্ধার্থের অসামান্য জ্ঞানপ্রসূত চিন্তাধারা থেকে জন্মলাভ করে একটি দর্শন, যা কালের বিবর্তনে একটি ধর্ম রূপ লাভ করেছে। বৌদ্ধ ধর্ম। ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি পঞ্চম খ্রিস্টপূর্বাব্দে জীবিত ছিলেন। তাঁর জীবনকালেও তিনি এই বাঙালদেশে (বাঙালদেশ বলতে মূলত গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার এলাকা ধরে নিচ্ছি; জৈন্তিয়া ,লুসাই, কামতা পাহাড়ের পশ্চিম থেকে দামোদর-হুগলি নদীর অববাহিকা পর্যন্ত)বহু জায়গায় এসেছেন এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী তাঁর এখানে ছিল। সিদ্ধার্থ ও তাঁর অন্যতম শিষ্য আনন্দ বাংলার বাঁকখালি নদীর পাড়ে টিলার উপর রাত কাটিয়েছেন বলে জানা যায়। তাঁর প্রচারিত দর্শনে বহু নিম্নবিত্ত মানুষ বুদ্ধাদর্শে দীক্ষিত হতে থাকে। বলা বাহূল্য, রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব তখন ক্ষত্রিয়দের হাতে এবং সিদ্ধার্থ সেই দায়িত্ব ছেড়ে মানবকল্যাণে তাঁর অর্জিত জ্ঞান বিলিয়ে বেড়াতে ব্রতী হন। তৎসময়ে বিশ্বজনসংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত হয়। মধ্য এশিয়ায় সুবিশাল পারস্য (আকামেনিড) সাম্রাজ্য, চীনের পূর্বতম অঞ্চলগুলোতে চৈনিক সভ্যতা, আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলে বান্টু জাতি, ইউরোপে গ্রীক, বর্বর গল ও ইট্রুস্কান সভ্যতা এবং আমেরিকায় জাপোটেক গোত্রের বসবাসের নিদর্শন পাওয়া যায়।

বাঙালদেশে আরো প্রাচীন জনবসতির খোঁজ করতে গেলে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের তাম্রযুগের নিদর্শন পাওয়া যায়। আর্যদের বেদে এই অঞ্চলে জনবসতির খোঁজও মেলে। তখন তা মগধের অধীন ছিল বলে কনিষ্ঠতম বেদ, অথর্ববেদে উল্লেখ আছে। মেসেডোনীয় সম্রাট আলেক্সান্ডার ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বে হিন্দুকুশ পর্বত পার হয়ে আসার আগ পর্যন্ত এখানকার ইতিহাস বেদ, মহাভারত, রামায়ণ - ধর্মগ্রন্থের নমুনা থেকেই পাওয়া যায়। সে বর্ণনা খুব একটা সুখকর না বাঙালদের জন্য। এর চার বছর পরেই চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য বিশাল উত্তর ভারতের প্রায় সমগ্র গঙ্গা অববাহিকা করায়ত্ত্বে আনতে সমর্থ হন। এরপরের ইতিহাস যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ বিশিষ্ট এবং তার কারন লিখন পদ্ধতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা যা এক রাজকীয় দায়িত্বপ্রাপ্তের দ্বারাই সম্ভব ছিল। তো, মগধ থেকে মৌর্য, গৌড় হতে গুপ্ত রাজারা অভ্যুত্থান ঘটান এবং সমগ্র গঙ্গা অববাহিকা নিজেদের অধীনে রাখার সংগ্রাম আজীবনই চালিয়ে যান। এরই মধ্যে আরেক বাঙালদেশের রাজা শশাঙ্ক গুপ্তদের সময়ের প্রথম স্বাধীনরাষ্ট্র পত্তনে সমর্থ হন।  ইত্যবসরে বাঙাল জাতি হিন্দু-বৌদ্ধতে মিশে একাকার হতে শুরু করেছে। মাৎস্যন্যায়ের সময়কাল পার করে বাঙালদেশ দেখে বৌদ্ধ আমজনতা থেকে উঠে আসা এক বিপ্লবী পাল রাজাদের। তাঁদের অধীনে বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি বাংলা ভাষারও অনেক শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। পাল রাজারা এতদ অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে শিক্ষা-দীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় স্বরূপ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন যার পন্ডিতরা বাংলা ভাষার কিছুটা পরিমার্জন এবং প্রয়োগ করে একে মহিমান্বিত করেন। এবং পালরাই সম্ভবত প্রথম কোন রাজবংশ যারা বাঙালের দেশ থেকে উত্থীত হয়ে পশ্চিমে ভারতীয় অঞ্চল জয় করে বহুদিন শাসন বজায় রাখতে পেরছিল। সমগ্র বাঙালদেশে তখন বৌদ্ধ ধর্মের প্রাধান্য এবংসহজিয়া মতাদর্শী বলে বেশ জনপ্রিয় বহির্বিশ্বেও। এসময়কার সম্পাদনা গ্রন্থ বাংলার আদিতম নিদর্শন চর্যাপদ। সেই সময়ে ইউরোপে পরাক্রমশালী রোমান সাম্রাজ্য, ইংরেজ প্রভাব তখনো অনুপস্থিত উল্লেখযোগ্যভাবে, আরবের মুসলিম সাম্রাজ্য এক-চতুর্থাংশ মানুষের শাসক, প্রভাবিত সমসংখ্যক আফ্রিকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতির (সোয়াহিলির বিকাশ) উত্থান, চীনে শক্তিশালী সং সাম্রাজ্য, আমেরিকাতে ইনকা, মায়া ইত্যাদি ক্ষুদ্র জাতির আত্মপ্রকাশ ঘটে।

কর্ণাটক থেকে আসা ক্ষত্রিয় সেন বংশের আগমনে বাঙালদেশ প্রগাঢ় হিন্দুত্ববাদে মশগুল থাকে। তাঁদের দমননীতির প্রভাবে বহু বৌদ্ধ ভিক্ষু ও জনতা হিমালয় পাড়ি দেয় অথবা আরো পূর্বে লুসাই পাহাড় পাড়ি দেয়। সেনদের আমলে বাংলা সাধারণ জনগণের মুখে শুধু শোনা যেত। রাজবংশীয়রা অসামান্য সাহিত্যানুরাগী এবং জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের প্রকৃত আদরণীয় ছিল সংস্কৃত। অভিজাতদের নাক শিটকানোর শুরু তখন থেকেই। সেন দের সময়েও বাংলার চর্চা চলতে থাকে। তুর্কি মুসলমানদের আগমনে বাংলার সমাজ একটু থমকে যায়। নতুন জীবনধারা এবং তার সাথে নব্য-মুসলিমদের এবং পূর্বাপরবিশ্বাসধারীদের মানিয়ে নিতে বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে যায়। তাই সাহিত্যের ধারাও বেশ ক্ষীণ এ সময়ে।

The language tree of Indo-Aryan Language. Top right side is Indic and under it Bengali; Source

এরই মাঝে সংস্কৃত ধীরে ধীরে অঞ্চলভেদে বেশ ভিন্নতরে রূপে ব্যবহৃত হতে থাকে। সমসাময়িককালে হিন্দুস্তানি, পাঞ্জাবি, মারাঠা, উড়িয়া, অসমিয়া ইত্যাদি বাংলার কাছের ও দূর সম্পর্কের কাজিন ভাষাগুলোর উদ্ভব ঘটতে থাকে। তুর্কিনাচন পর্ব শেষে বাংলায় অধিষ্ঠিত হয় একে একে আফগান, হাবশি, আবার আফগান শাসকরা বাংলার মানুষদের অধীন করে রাখে। মধ্য এশীয় মোঘলরা বাংলায় আসার আগেই বাংলা একটি সমৃদ্ধশালী জনপদ এবং বাংলা বেশ বড় একটি জনগোষ্ঠীর মুখের, লেখার এবং আবেগের ভাষা। যদিও ধর্ম সম্পর্কিত ছাড়া খুব একটা লেখালেখির নিদর্শন মিলে না, তবুও এসময়কার বিদ্বান লোকেদের ভাষা বাংলাই ছিল, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে। আর নিত্যকার জীবনধারনের ভাষা তো অবশ্যই বাংলা। মুসলানদের ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যেও বাংলা ব্যবহৃত হত। মুসলমান শাসকদের প্রায় ক্ষেত্রে বাঙ্গালিদের উচ্চতম আসন দান এবং বাংলার মাধ্যমে নানা উপদেশ বানী প্রচারের মাধ্যমে বহু লোক ধর্মান্তরিত হয়। পাশাপাশি আরব ও পারস্য থেকে আগত দরবেশ বা ধর্মপ্রচারকের চারিত্রিক শুদ্ধতা ও গরিমায় অভিভূত হয়েও বহু মানুষ ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করে।  এ সময়কার আফগান শাসকরা সাধারণ জনগণের ভাষার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেন এবং যার ফলে তা ভাষা হিসেবে মজবুত ভিতের উপর দাঁড়ায়। এর জন্য অবশ্য দিল্লীর মসনদের ঢিলেঢালা নেতৃত্ব এবং আফগানিদের সমরকুশলতার দরুন বাংলার দীর্ঘকাল স্বাধীন থাকা দায়ী। উল্লেখ্য, সেই সময়ে ইউরোপীয় রেনেসাঁর প্রভাবে যে গণজাগরন ইউরোপে পরিলক্ষিত হয় তার জোয়ারে মোটামুটি ২৫০ বছরের মধ্যে সমগ্র ভূভাগের অধিকাংশের শাসনাধিকার ইউরোপীয় শক্তিদের হাতে ন্যস্ত হয়।
মোঘলদের সময়ে বাংলা প্রাদেশিক রাজকার্যে ব্যবহৃত হতে থাকে। নবাবি আমলে ফারসি, উর্দু অভিজাতদের ভাষা হলেও বাঙালির ভাষা বাংলার কদর কমে নি একটুও। বহিরাগত সকল শাসকই বাংলাকে একবাক্যে ঐশ্বর্যশালী এবং উদার জনপদ বলে আখ্যা দিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ইংরেজ আগমনের পূর্বে বাংলার নিদর্শন ছন্দবদ্ধ কাব্যকলায়ই সীমাবদ্ধ ছিল। ইংরেজরা এদের শাসনব্যবস্থা হাতে তুলে নেয়ার পাশাপাশি ভাষাকে পরিশীলিত করার চেষ্টা করে। গদ্য তাদেরই অবদান।

Sam Thornton, an EIC officer presented this map to Governor of EIC depicting Bengal Kingdom as "The Rich" one: 1600s.
EIC : East India Company

ইংরেজদের সময়ে ব্রাহ্মণ হিন্দু এবং মুসলমানদের যারা শিক্ষালাভ করেছিল তাঁদের বিভিন্ন কীর্তি পরবর্তীতে জনবিদিত হয়। জ্ঞানার্জনের সুফল ইংরেজদের সময় থেকে বাঙালরা চর্চা করার সুযোগ পায় বৃহত্তর পর্যায়ে। বাঙালরা সরকারি কর্মচারী হয়ে সমগ্র ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মায়ানমারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া শুরু করে প্রভাবশালী হয়ে। সাধারণ মানুষ যে এর আগে যেত না, তা নয়। কিন্তু বাংলার এহেন বিস্তার এ ভাষার বুনিয়াদকে আরো শক্তই করেছে। এবং তাঁদের অনেকে বৈদেশ-অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিয়ে ভাষাকেও সমৃদ্ধ করেছেন। তবে আদিকাল থেকেই বাংলার মাটির উর্বরতা ভূবনবিখ্যাত থাকায় কোন শাসকই এবং সাথে আবেগপ্রবণ অনেক বাঙালও এ দেশের বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতো না। স্বদেশপ্রেম হোক, কুঁড়েমি হোক, অর্থ সঙ্গতি বা কৌতূহলের অভাব হোক - বাঙালদের বিচরণ বিশ্বাঙ্গনে ইংরেজদের পূর্বে খুবই সীমিত। (এক্ষেত্রে দ্বাদশ শতাব্দীর অতীশ দীপঙ্কর স্মরণীয়)

বিংশ শতাব্দীর শক্তিশালী জাতীয়বাদের আন্দোলনে বহু উপনিবেশকারী তাদের অধিকার ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, অনেক ক্ষেত্রে নিজস্ব দরকারে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে আসে। কিন্তু ইউরোপীয় শক্তিদের সম্পত্তি প্রত্যর্পনের ইতিহাস অনুযায়ী অনুমান করা যায় তাঁরা মোটেও ভাগাভাগির সময় স্থানীয়দের সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিত না। ফলে প্রচুর জাতিবিভাজন এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। প্রদেশ হিসেবে বাঙালদেশ প্রতিষ্ঠিত হবার আগেই অবশ্য ভাগের বিষয়টি বিংশ শতাব্দীর প্রথমেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের মোহে বাংলা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের নেতৃত্ব হারাল আবার। হাজার বছরের বাঙালি জাতি তখন দ্বিধাভক্ত। যে জাতিটির অমিত সম্ভাবনা ছিল বিশ্ব দরবারে আরো বড় ভূমিকা রাখার তাদের শক্তি খর্বিত হল। বহিঃশক্তির প্রভাবের পাশাপাশি এর পেছনে স্বকীয় বিবেচনার অভাবও বেশ খানিকটা দায়ী বলে বোধ হয়।

Sheikh Mujibur Rahman delivering his historical 7th March Speech, 1971: UNESCO Recognition

সহস্র বছরের একটি জাতি যার ইতিহাসে স্বাধীনতার ঝাণ্ডা তারা হাতে নিতে পেরেছে এমন খুব কম সময়ই আছে। বাঙালদেশে জন্ম, এখানকার ভাষায় উজ্জীবিত, এখানকার মানুষের সাথে একাত্ম এবং সর্বোপরি সেই সমাজের পক্ষ থেকে সমগ্র জাতির শাসনভার নিতে উদ্যত হয়েছে এমন বাঙাল জাতির ইতিহাসে খুব একটা পরিচিত নয়। কিন্তু সেই জায়গাতেই উত্থান ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামের এক জ্বালাময়ী নেতার। তিনি যেই জাতীয়তাবাদ এবং স্বাধীনতার হাহাকার নিয়ে জাতির ইতিহাসে জাজ্জ্বল্যমান তা কিন্তু আর একজনও নন। পূর্ববর্তী সকল সময়ের স্বাধীন বাংলার শাসক ছিলেন হয় বৌদ্ধবিরোধী পরাক্রমশালী হিন্দু শাসক (শশাংক), না হয় বাঙাল উদ্ভূত হলেও পরবর্তীতে বৃহত্তর রাজ্য সামলাতে পশ্চিমে স্থানান্তরিত রাজবংশ (পাল), অথবা আফগান উচ্চাভিলাষী দিল্লীর রাজকর্মচারী (ইলিয়াস শাহ্‌), নয়তো আরব-তুর্কি উচ্চাভিলাষী বিহারের নায়েব (আলিবর্দি খাঁ)। কিন্তু শেখ মুজিব বাঙালদের মাঝে প্রথমবারের মত প্রকৃত জাতীয়তাবাদের প্রচার করলেন। জাতি ও স্বাধিকার এবং এদের অস্তিত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করে যাওয়া নেতার উদাহরণ সারা বিশ্বে একটু কমই বলা যায়। তিনি যেই সময়কাল এ বাঙাল জাতের অর্ধেকের জন্য এনে দিয়েছেন সে জন্যেই স্বাধীনতার পর এখনো এ দেশের শাসক যেই উপায়েই দেশ চালনা করুক না কেন, তারা সবাই বাংলাদেশী। এবং সেই পরিচয় এখনকার বিশ্বে দুই শতাধিক  স্বীকৃত-অস্বীকৃত জাতিদের মধ্যে একটি। বাংলা ভাষী জনগোষ্ঠীদের মাঝে একমাত্র স্বাধীন জাতি।

স্বজাতীয় দ্বারা শাসন মূলত নতুন একটি ধারণা বিশ্ব ইতিহাসে। স্বাধীনতা যেমন বহু জনপদে আশীর্বাদ রূপে এসেছে (ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা) তেমনি বহুলাংশে নিয়ে এসেছে ভয়াবহ বিশৃংখলা ও অরাজকতা (মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা) যা অতি শীঘ্রই দূরীভূত হবে বলেও কোন নিশানা নেই। বাংলাদেশিত্ব বা যেকোন নাগরিকত্বের পরিচয়ও হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ক্ষয়ে যাবে। কিন্তু 'বিশ্ব নাগরিক' হওয়া বিষয়টা যেহেতু এখনও তড়িৎচালিত যন্ত্রের দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ, তাই বোধ করি ভৌগোলিক সীমানায় এবং এর বাইরে তারই প্রতিনিধি হয়ে স্বীয় ক্ষমতাবলে অবদান রেখে যাওয়াই উত্তরাধুনিক জগতের ৭০০ কোটি মানুষের সাধারণ অনুপ্রেরনা হওয়া উচিত। যদি জাতীয়তাবাদ আর ভোগতত্ববাদ একইসাথে একবিংশ শতাব্দীর ধ্যান ধারণাকে গ্রাস করে রাখে তবে জাতিগতভাবে উত্তরণ এবং আত্মপ্রকাশ প্রতিটি স্বাধীন দেশের মূল ভাবনা হওয়া উচিত। ভবিষ্যৎ কেউই দেখতে পায় না। কিন্তু উপযুক্ত এবং যোগ্য শাসক এদেশ চালনার ক্ষমতায় না থাকলে বহিঃশক্তির পুনরায় আগ্রাসন ঘটবে না সেই নিশ্চয়তা নেই। গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র বা যেই তন্ত্রমতেই দেশ চালনা করা হোক না কেন, সে দেশের উত্তরণ অনেকাংশে শাসকের উপর নির্ভরশীল এখনো। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লাগবে শিক্ষা এবং সমাজতন্ত্রের জন্য লাগবে বিশ্বাস ও শিক্ষা। বাঙালরা কি করবে সেটা সম্পূর্ণরূপেই তাদের উপর নির্ভর করে।




Comments