A Pretext on Appreciation of Art and an Anime 'Naruto' (In Bangla)

"The prose-writers can only step aside when the poet passes" 
-William Somerset Maugham
This quote just symbolizes how one art form cultivator appreciates and thinks about other. Everyone has his or her own view of things and way of understandings. Hence, when a well-versed persona finds solace in books or thought provoking art form for entertaining oneself, a relatively restless person would go for easy to have and consume means for the same purpose. Let me exemplify: One can say পথের পাঁচালী (A ballad of the roads) the film by Ray is more veritable than Bibhuti Babu's novel, also, the opposite can be said. Whereas it can be safely opined that the both art delivery of the same narration can be appreciated independently and get taken away easily. This is the same argument as "Who is the better between Don Bradman and Pele?". This is unfair, right? Now, what all the fuss is about? 
It's actually common among us to easily disregard an art form (whose sole purpose is to convey a message or feeling through creative way) when it does not align with our own choice. Likely, it goes without saying that we nurture a tendency to judge our own choice way more higher than that of others. Subjectivity eventually subdues objectivity among people. In this process, the artist becomes thankless while this shouldn't be the case. A story or emotion can be delivered in so many different ways that one connoisseur of art forms can be bewildered how diversely a single piece can be demonstrated successfully. A message of unity can be told through a speech, a novel, a poem, a movie, a painting, a song - one can name it. Fortunately, every format has a sizable recipient all around the globe, hence the artists still can thrive after the revolution followed by food surplus incident. As we, the human are blooming at 7.1 billion, a staggering number with a more bewildering choice frame, art forms are also diversifying with the pace of technological advancement. So, it's common even among the very peer of ourselves to find populace with different type of affiliations towards different art forms. We can not be cynical towards them or can we? In the end, Tagore can be remembered for one of his quotes to sum up this palimpsest. Here, we can see the harmony between two written art form without conflicting each other:
“The young student sits with his head bent over his books, and his mind straying in youth's dreamland; where prose is prowling on the desk and poetry hiding in the heart.” 
 From now on of this piece, this is all about Anime. Nothing new can be said about the Japanese animated form of storytelling popularly known as Anime. A revolutionary art form which brought forth the Orientalism during the early Taisho period shortly after Meiji era. Now, through Japanese takeover in many media outlets, this form is quite popular among the dilettante people group as well as the so called Millennials. Why am I blabbering about all these? For that I am going to switch to my mother tongue.

অনেকেই নাক সিঁটকিয়ে দেন জাপানিজ এনিমে বা মাঙ্গার কথা বললে। এনিমেশন বিষয়টা কমবয়সী মানুষের মাঝে জনপ্রিয় বিধায় পরিণত মানুষের মাঝে 'জ্যাঠামি' ধরে রাখতে অনেকেই হয়ত এই কলাটিকে ঠিক মতন গ্রহণ করতে পারে না। আবার সিনেমা না হলে দীর্ঘ এনিমে সিরিজগুলো বেশ ধৈর্যসাধ্য ব্যাপার। সেই সময় ও মনোযোগ শিক্ষাকালীন সময় ছাড়া বের করা দুষ্কর বটে। কিন্তু এই শক্তিশালী মাধ্যমের অন্তর্গত যে ক্ষমতা তা প্রমানিত হয় স্টুডিও ঘিবলি, তোয়েই এর মত কোম্পানিগুলোর অসাধারন কিছু কাজের দ্বারা। Grave of the Fireflies, Mononoke, Spirited Away, My Neighbor Totoro এর মত অবিস্মরণীয় সৃষ্টিগুলো অস্বীকার করবার মত পাটা খুব বেশি লোকের নেই।

পরিচিতিঃ

প্রচলিত ধারার জনপ্রিয় মাঙ্গা সিরিজ মাসাহি কিশিমোতোর নারুতো! যা থেকে স্টুডিও পিয়েরো ও টিভি টোকিও তৈরি করে জনপ্রিয় একটি এনিমে সিরিজ। পুরো গল্পটা একটি কাল্পনিক জগতে যেখানে নিনজাদের রাজত্ব। তাদেরকে শিনোবি নামে ডাকা হয়। সবাই অবশ্য শিনোবিদের মত অমানবিক ক্রিয়াকর্মে পারদর্শী নয়। তারা 'চাকরা' নামের অন্তঃজ শক্তি ব্যবহার করে নানাবিধ মৌলিক উপাদান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আগুন, বায়ু, পানি, মাটি, বিদ্যুৎ - এই পাঁচ ধরণের মূল উপাদানের উপর ভিত্তি করে পাঁচটি প্রধান রাষ্ট্র এই জগতের মূল বাহক ও হর্তা কর্তা। প্রতিটি দেশে আবার একটি প্রধান গ্রাম আছে যারা মূলত শিনোবিদের আশ্রম ও কারিগর হিসেবে কাজ করে। তকুগাওয়াদের সময়কার সামন্তপ্রথার অবয়বে পাঁচটি জাতির সহাবস্থানে এই কাল্পনিক জগতটির বিন্যাস। বড় রাষ্ট্রগুলোর মাঝে শক্তি সাম্য রাখার জন্য বাফার স্টেটও আছে সীমানাবর্তী এলাকায়। এছাড়াও আছে 'বিজু' নামের মহা শক্তিশালী কিছু জন্তুর সুষম বণ্টন যাতে সবগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা নির্দিষ্ট সীমার ভেতরে থাকে। কাহিনীর প্রধান ও নামীয় চরিত্রটি অগ্নিরাষ্ট্রের কনোহা বা 'পাতায় লুকনো' গ্রামের। নারুতো (২২০ পর্ব) ও নারুতো শিপ্পুদেন (৫০০ পর্ব) - এই দুটি এনিমে সিরিজে সমগ্র কাহিনীটি ব্যপ্ত। প্রথম সিরিজে নারুতোর শৈশব থেকে কৈশোরে বেড়ে উঠা আর দ্বিতীয়টিতে তার পরিপক্ক শিনোবি হয়ে উঠা এবং কাহিনীর পরিণতি।

নারুতো জগতের মানচিত্র
পাঁচটি প্রধান গ্রাম

এই পাঁচটি রাষ্ট্রের প্রধান কর্তা সামন্ত প্রভু বা ফিউডাল লর্ড আর তাঁদের সেনাবাহিনীর জন্য প্রধান পাঁচটি গ্রামের নেতা হল 'কাগে' বা ছায়া। তাঁরা প্রতিটি শিনোবি গ্রামের রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ইত্যাদি কাজের সাথে সামন্ত প্রভুর সাথে লিঁয়াজো রক্ষার কাজ করে থাকে। শিনোবিরা তাঁর অধীনে ও নির্দেশে বিভিন্ন রকম ছোট খাট থেকে শুরু করে বড়-বড় মিশনে অংশগ্রহণ করে থাকে। রাষ্ট্রগুলোর মাঝে যুদ্ধও হয়ে থাকে। সেসব সময়ে জন্ম নেয়া অনেক নায়ক-মহানায়ক ও খলনায়কদের নিয়ে বিশাল এক গাঁথা এই নারুতো।

প্রধান ৫ গ্রাম প্রধান


দর্শনঃ

প্রতিটি লম্বা এনিমেগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অমানবিক পর্যায়ের মারামারি এবং অবাস্তব বিষয়-আশয় ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। কেউ বাতাস থেকে হাতে বজ্রের তলোয়ার নিয়ে আসছে, কেউ হাতেই গোলক বোমা বানাচ্ছে। আবার কেউ মুখ হতে ফুঁ দিয়ে আগুন, পানি, মাটি, ঘূর্ণিঝড়ের তোপ দাগছে। আবার কেউ কেবল চোখের দিকে তাকিয়ে অসম্ভব কান্ড ঘটিয়ে দিচ্ছে। কাল্পনিক ও অদ্ভুত এ বিষয়গুলো যখন বিশ্বাসযোগ্য পশ্চাৎ কাহিনী থেকে বেরিয়ে আসে তখনই কেবল এসবের প্রতি মানুষের আগ্রহ জন্মে ও কল্পনা জেনেও বিশ্বাস করার ইচ্ছে জাগে।
চোখ ধাঁধানো মারামারি এবং একের পর এক নিত্য নতুন যুৎসু (চাকরা ব্যবহার করে বিশেষ ধরণের আক্রমণ বা রক্ষণ) ছাড়াও এই এনিমের অন্যতম অপরিহার্য অংশ হল কিছু গভীর জীবন-দর্শন। প্রধান যে বিষয়টি আমার চোখে পড়েছে তা হল একটি চিরচেনা দ্বন্দ্ব। ইন এবং ইয়াং। কালো ও ধলো। আঁধার ও আলো। ভালো ও মন্দ। একে অপরের বিপরীত কিন্তু উভয়ের সহাবস্থান না হলে পরিপূর্ণতা আসে না। এভাবেও বলা যায়, কোন অবস্থাটি ঠিকঃ
'নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল' নাকি 'দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল'
Yin and Yang: Perpetuity of good and evil with their coexistence

যখন কাহিনীর চরিত্রগুলোর একাংশ প্রথম ধারার মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে চতুর্থ নিনজা মহাযুদ্ধে অবতীর্ন হয় তাদের মুখোমুখি হয় দ্বিতীয় ভাবাদর্শে উদ্বেলিত গুটিকয়েক কিন্তু বিশাল শক্তিশালী চরিত্র। একা সকল শক্তির অধিকারী হয়ে জাগতিক কল্যাণসাধন করা মানবজাতির জন্য বেশি সুবিধার নাকি সকলকে একত্রে নিয়ে শান্তি ও সংহতির ভাবাদর্শে চালিত হয়ে প্রগতিশীল সমাজ গড়ে তোলা। প্রথম পক্ষের লোকেরা আশাবাদী ও অপরজনেরা নৈরাশ্যবাদী। মানবজীবনে সবসময় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব না-সেখানে ব্যর্থতা, সহযোদ্ধার (পরিবার/বন্ধু) হারিয়ে যাওয়া - এ সবকিছুই থাকে। মানুষের স্বপ্ন বেশিরভাগ সময়েই থাকে অধরা। কিন্তু যদি এমন কিছু করা যায় যাতে করে সকল মানুষ যা পেতে চায় সেটা সে নিরন্তর স্বপ্ন দেখতে থাকবে এবং সে অবস্থাতেই আজীবন কাটিয়ে দেবে - সে ব্যবস্থাটি নিয়ে হাজির হয় পুরো কাহিনীর প্রধান খলনায়ক। আবার আশাবাদীর চোখে এই দুঃখ-দুর্দশা, হতাশা, ব্যথা, জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে জীবনের লক্ষ্য পূরণ করে যেতে ক্রমাগত লড়ে যাওয়াই জীবন। যেখানে কোনসময় ব্যর্থতা আসলে বন্ধু বা কাছের লোকেরা এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়াবে। শান্তি-সম্প্রীতির মাঝে বেড়ে  উঠতে থাকবে একেকটা সম্পর্ক ও এর মাধ্যমে সূচিত হবে বিশাল এক মানবসমাজ যেখানে সবাই সবার ঘৃণা-দ্বেষ, ভালবাসা-পছন্দের অনুভূতিগুলো সম্পর্কে জানবে এবং সহমর্মিতার আঁচলে একে অপরকে আগলে রাখবে। এই যুদ্ধকালীন অবস্থায় উপনীত হয়ে এ দুটি বিপরীতধর্মী দর্শনকে সংঘাতের পর্যায়ে আনার জন্য বিশাল এক কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। আবার এ সংঘাত যখন একদিকের পক্ষে হেলে পরতে থাকে তখন ঐশ্বরিক এক চরিত্রের অবতারণা করে সে সংঘাতটিকেও নিতান্ত ক্ষুদ্র করে দিয়েছে। তখন আবার মনে হতে থাকে দৈবিক যোগের কাছে মানুষের অসহায়তা কতখানি প্রকট। কিন্তু সেই সংকট থেকেও উত্তরিত হয়ে নবজাগরণ আনা সম্ভব যখন দুইটি ভিন্ন মতাদর্শী মানুষের প্রতিনিধি হয়েও একটিমাত্র লক্ষ্যকে সামনে রেখে মানুষ একসাথে কাজ করে। শেষ পর্যন্ত জয় কিন্তু আশাবাদীদেরই হয়। এতোগুলো স্তরীভূত দর্শন অসামান্য মুন্সীয়ানায় প্রকাশ করা সত্যিকার অর্থেই বাহবা পাবার দাবিদার। আরেকটি মজার বিষয় হল, কাহিনীর একটি পর্যায়ে ইন এবং ইয়াং এর বারবার বিভিন্ন প্রজন্মে পুনর্জন্ম নেয়া প্রসঙ্গে ইন্দ্রঅসুর এই যুগলের আগমন। হিন্দু পুরাণের দেবরাজ ইন্দ্র ও দেবতার বিরুদ্ধাচারী অসুর। কিন্তু নারুতোতে তাদের চারিত্রিক ও দার্শনিক রূপায়ন কিন্তু ভিন্ন।
এছাড়াও কাহিনীর দর্শনের পাশাপাশি প্রতিটি চরিত্রের আছে নিজস্ব জীবনদৃষ্টি। সকলের যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে যখন জীবনকে দেখতে থাকে এবং তার জন্য প্রত্যেকে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় তখন কারো ক্রিয়াকর্মকে দোষ দেয়া দুষ্কর হয়ে উঠে। প্রতিটি শিনোবি বা প্রতীকী অর্থে মানুষগুলো প্রচন্ড রকম ভাবালু এবং নিজ পন্থায় সাফল্য অর্জনে বদ্ধ পরিকর। নতুন আদর্শে অনুপ্রাণিত তারা তখনই হয় যখন বিশাল কোন চারিত্রিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বা অভাবনীয় দৃঢ় কোন মতাদর্শ তাদের নিজেদের ভাবনা জগতে আলোড়ন তুলে যায়। এখন নিয়ে আসতে হয় চরিত্রগুলোকে যাদের কারনে এই এনিমেটির মাহাত্ম বহুগুণে বেড়ে যায় বিনা সন্দেহে।
চরিত্রগুলোর মাঝে আরেকটি সুস্পষ্ট বিভাজন চোখে পড়ে। একদল ঘোরতর নিটশের ভক্ত এবং অন্যদল সার্ত্রের মতাদর্শে উজ্জীবিত। ইন-ইয়াং এর মত নিহিলিজম ও এক্সিস্টেনশিয়ালিজম এর মধ্যকার কড়া দ্বন্দ্ব। কারো কাছে এ দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকান্ড কুহেলিকা-ধোঁকা। কোন কিছুরই মানে নেই। আরেকদল নিরর্থকতা জেনে-না জেনে যতদিন বেঁচে আছে তার জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে নিজেদের জীবনকে সার্থকতা দিতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। এই দু মেরুর আকর্ষণ-বিকর্ষণ, সম্মোহন-বিতাড়ন - এসব কিছু মিলিয়ে সম্পূর্ণ এনিমে দৈর্ঘ্য (একটানা দেখে গেলে সাড়ে বারো দিন) ভয়ানক উপভোগ্য হয়ে উঠে।
পাশাপাশি বিভিন্ন মারামারির সময়কার আক্রমণ ও রক্ষনাত্মক টেকনিকগুলোর নাম বেশ আগ্রহ উদ্দীপক। জাপানিজ ধর্ম শিন্টো অনুযায়ী সৃষ্টিতত্ত্বের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ দেব-দেবীদের নামে বেশ কয়েকটি টেকনিক দেখা যায়। শিন্টোমতে দুই ধাপে জগতের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রথম ধাপে সাত প্রজন্মের দেব-দেবী। এবং এরপর এদের থেকে সমগ্র জগৎ চরাচর। দেবতাদের শেষ প্রজন্মের ইজানাগি (He)ইজানামি (She) হতে তিনজন প্রধান দেবতার উৎসারণ হয়। কাগুতসুচির (অগ্নিদেব) জন্মের সময় ইজানামির দেহ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইজানামি অন্ধকার জগতে চলে যায় এবং তাকে ফিরিয়ে আনতে ইজানাগির সেখানের যাওয়া হলে সে অপবিত্র হয়ে যায়। ফলে সাগরে তাঁর পবিত্রকরণের পর ইজানাগির বাঁ চোখ হতে জন্ম নেয়আমাতেরাসু (সূর্য দেবী), ডান চোখ হতেসুকিউমি (চন্দ্র দেব) ও নাক হতে সুসানো (সাগর ও ঝড়ের দেবতা)। শিন্টোবাদের তিনজন দেবতার উল্লেখ ও প্রয়োগের পাশাপাশি ভারতীয় ভাববাদ থেকে উৎসারিত চাকরা এর ধারণা পুরো কাহিনীকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। সাথে ইন্দ্র ও অসুরের কোন্দল। সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ দার্শনিক সম্মিলন ও উপস্থাপনা।

চরিত্রঃ

অসামান্য মারামারির দৃশ্যকল্পের পাশাপাশি মাসাহি কিশিমোতোর অনন্য সার্থকতা কিছু অসাধারণ চরিত্র নির্মাণে। চরিত্রগুলোর নিজস্ব আদর্শগুলোও গভীর চিন্তা উদ্দীপক। মূল হোতা নারুতোর পাশাপাশি এ কাহিনীতে সন্নিবেশিত আছে অনেকগুলো 'জীবন থেকে বড়' ও আবেগ সঞ্চারী চরিত্র। যাদের উত্থান-পতনের সাথে দর্শকের আবেগের ছকচিত্রে প্রচুর বক্ররেখা তৈরি হতে বাধ্য।

নারুতো উজুমাকি (Uzumaki Naruto) -

যাকে ঘিরে সমগ্র কাহিনীটি আবর্তিত। জন্মের সময়ে বাবা-মাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে কোনোহা গ্রামের এক শিনোবি বাচ্চা। সে গ্রামের মানুষদের কাছে স্বীকৃতি চায় আর সবার মনোযোগ আকর্ষনের জন্য উদ্ভট-বিরক্তিকর-পীড়াদায়ক তামাশা করে থাকে। যার জন্য গ্রামের সকলে অতীষ্ঠ কিন্তু তার বংশ পরম্পরা ও 'বিজু'র মালিক বা 'জিনচুরিকি' হবার কারনে সে নিনজা একাডেমিতে ঢুকে এবং সেখানে শিনোবি হবার প্রশিক্ষন নিতে থাকে। নারুতোর গুরু ছিল ইরুকা উমিনো, কাকাশি হাটাকে, জিরাইয়া। এছাড়া কুরামা (নয় লেজী), হাগোরোমো অটসুট্‌স্কীদের কাছ থেকে নারুতো অভূতপূর্ব ক্ষমতার অধিকারী হয়। বহু সময় পার করে এই উচ্চ আওয়াজের ও প্রায় বোকাগোত্রীয় চরিত্র আমাদের এত কাছে চলে আসে যে চতুর্থ যুদ্ধ শেষে সে যখন তার পিতাকে বিদায় দেয়ার সময় তার মায়ের মৃত্যুকালীন উপদেশগুলো আবার বলে কেঁদে উঠে তখন দর্শক হঠাৎ করে চোখ জ্বালা-পোড়া অনুভব করলে দোষ দেয়া যায় না। এই চরিত্রটির উজ্জ্বলতম দিকটি হচ্ছে - হার না মানা এক অদম্য ইচ্ছাশক্তি, শরীর ও মনের শেষ বিন্দু শক্তি দিয়ে নিজের কাছের মানুষগুলোকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তার জন্যই সে বলতে পারে,
 "Give up on me giving up"

সাসকে উচিহা (Uchiha Sasuke) -


উঁচু বংশের মেধাবী ও সুদর্শন নিনজা যার জীবনপণ থাকে তার বড় ভাইকে হত্যা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া। তার বড় ভাই যে কিনা তার সমগ্র বংশ সাফ করে নিজে ফেরারি হয়ে আছে এবং তার নিজের শৈশবকে করেছে তিক্ত। সময়ের সাথে তার জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বাড়তেই থাকে। নৈরাশ্যবাদে নিমজ্জিত হয়ে প্রতিশোধের আগুন জিইয়ে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মত বেশ জটিল মানসিকতার একটি চরিত্র সাসকে। কাকাশি ও অরুচিমারু হতে আসে তার শিক্ষার পাট। শারিঙ্গানের শক্তিকে সে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। একাকিত্ব তার সবচেয়ে আরাধ্য এবং সেজন্য সে একমাত্র বন্ধুকে হত্যা করতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হয়না। ইন সত্তার অধিকারী ইন্দ্রের অবতার এই সাসকে যেখানে নারুতো হল ইয়াং সত্তার অধিকারী অসুরের অবতার।



ইটাচি উচিহা (Uchiha Itachi) -

অসামান্য পার্শ্ব চরিত্র। কিন্তু তাকে পার্শ্ব চরিত্রের স্থান দেয়া হলে অবমাননা হয়ে যায়। সাসকের বড় ভাই-যে আড়ালে থেকে আজীবন নিজ গ্রাম এবং প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ধরে রাখার জন্য নিজ ঘাড়ে খড়গ রেখে দেশান্তরী হয়। ত্যাগ স্বীকারের এক অনন্য মহৎ উদাহরণ ইটাচি। ছোট ভাইয়ের প্রতি অবিস্মরণীয় রকমের স্নেহ পুষে রাখার দরুন সে ভাইয়ের হাতেই মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু তার চলমান আদর্শের জন্য যে নির্মম বঞ্চনা ও শোক বহন করতে হয়েছে এবং এত কিছুর পরও যে সে স্বাভাবিকভাবে তার জীবনাদর্শের অনুসারী থেকে নারুতো আর সাসকেকে দিক নির্দেশনা দিতে পেরেছে - এখানেই তার মূল সার্থকতা। ঘোরতম কুয়াশার ঘেরা জীবনের পুরো সময়টা সে ডাবল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে যায়। অন্ধকারের নায়ক ইটাচি। গুপ্তচরবৃত্তির কারনে নন্দিত চালকসমাজের কাছে কিন্তু আপাত বিশ্বাসঘাতকতার কারনে নিন্দিত আপামর জনসাধারনের কাছে। ভাল না বেসে থাকা প্রায় অসম্ভব। নিজের ছোট ভাইকে শক্তিশালী ও রূঢ় দুনিয়ার সাথে টিকে থাকার জন্য তার মাঝে ঘৃণা ছড়িয়ে দেবার জন্য সে বলে যায়,
"Foolish little brother, if you wish to kill me, then Hate me, Detest me, Curse me, and survive in an unsightly way. Run, Run and cling to your pitiful life."


জিরাইয়া (Jiraiya) -

ইটাচির মত আরেকজন অসামান্য চরিত্র। একসময়কার যুদ্ধকালীন তিন কিংবদন্তীর একজন হিরো। শখ ঘুরে বেড়ানো আর সেই অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি নিয়ে উপন্যাস লেখা। শিনোবিদের তিনটি অননুশীলিত রীতির (ঋণ, নারী ও মদ) তিনটিতেই তার বেশামাল পদচারনা। তিন কিংবদন্তীর একজন সুনাদেকে আজীবন ভালবেসেও বলতে না পারায় সে যাযাবর জীবন কাটায় এবং মেয়েদের সাথে 'দুষ্টুমি' করে মেইক-আউট টেকনিক নিয়ে বই লিখে। যে বইয়ের আবার অন্যতম পাঠক কাকাশি হাটাকে। এই জিরাইয়া আবার অসামান্য নিনজা গুরু। সে নিজে তৃতীয় হোকাগের শিষ্য এবং চতুর্থ হোকাগে, মিনাতো নামিকাযে ও তাঁর ছেলের গুরু। এছাড়াও যুদ্ধকালীন মুহূর্তে যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি এলাকায় যুদ্ধে এতিম হওয়া কিছু শিশুকে সে নিনযুৎসু শিখায়। যাদের একজন নাগাতো (পেইন) পরবর্তীতে কাহিনীর এন্টাগনিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়। সেই নাগাতো থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই জিরাইয়া লিখে তাঁর প্রথম উপন্যাস 'একজন নির্ভীক শিনোবির কথা' যার নায়কের নাম থেকেই নারুতোর নামকরন করা হয়। সে ব্যাঙ সাধু পর্যায়ের যুৎসু ব্যবহারকারী হয়েও নিজের ছাত্রের কাছে মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুকালীন সময়েও সে গ্রামের তথা সমগ্র জাতির জন্য রেখে সাংকেতিক একটি বার্তা। বিশাল গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক বজায় রাখলেও সে সাধারণত মানুষের সামনে খুব সহজ স্বাভাবিক আচরণ করত, কিছু ক্ষেত্রে সেগুলোকে বোকামিও মনে করা যায়। সে নারুতোর গডফাদার এবং তাকে পরিণত করে তুলতে বিশাল ভূমিকা রেখে যায়। হার মেনে না নেয়ার নীতি নারুতো এই মহান শিক্ষক থেকেই অর্জন করেছে আর তার সাথে একটি মারাত্মক আক্রমন তরিকা - রাসেনগান। চরিত্রটির বিশ্লেষণের জন্য এ পরিসর একটু ছোট ঠেকছে আমার কাছে। তাঁর নিজের যাযাবর জীবন থাকা সত্ত্বেও ঘরের অসামান্য একটি সংজ্ঞা সে নারুতোকে দিয়ে যায় -
"They say wherever someone is still thinking of you, that place is your home"

অরুচিমারু (Orochimaru) -

তিন কিংবদন্তীর একজন এবং পুরো কাহিনীর সবচেয়ে বেশি সময় শত্রুপক্ষে অবস্থান করা একটি অত্যন্ত জটিল চরিত্র। তার জীবনের লক্ষ্য থাকে যেভাবে হোক - সকল প্রকার যুৎসু আয়ত্ত করে চির অমরত্ব লাভ করা। সেজন্য সে বেশির ভাগ সময়ে পুরো বিশ্বজুড়ে নানা স্থানে গোপন পরীক্ষাগার বসিয়ে নিষিদ্ধ গবেষণা করে যায়। বহু সফল-বিফল পরীক্ষার মাধ্যমে এই বিজ্ঞানী শিনোবি বেশ কিছু সংকর ও পরিবর্তিত মানুষ তৈরি করে ও নিজেও (প্রায়) অমরত্ব লাভ করে। এমনকি একার উদ্যোগে সে একটি গ্রাম 'শব্দ দ্বারা লুকানো' নামে প্রতিষ্ঠা করে। সাপের সাধু পর্যায়ের একজন শিনোবি অনেকসময় কাহিনীর মারপ্যাঁচে ও দৃশ্যায়নে ঘৃণা উদ্রেককারী মনে হলেও এই চরিত্রটির গুরুত্ব সমগ্র কাহিনীর আবহ ও গতি সঞ্চারনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জীবন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। জীবন রক্ষা-দান ও এর সাথে জীবনীশক্তি বাড়ানো তাঁর একমাত্র শখ ও নেশা। মরেও মরে না এমন পিছল যে সাপ তাই অরুচিমারু। তাই জীবন সম্পর্কে তাঁর কিছু গভীর উপলব্ধির বানী আমরা পাই-
"Either people change or they die before they do. It's one or the other."
"Maybe, just maybe, there is no purpose in life... but if you linger a while longer in this world, you might discover something of value in it." 
ওবিতো উচিহা (Uchiha Obito) -


খুব অল্প সময়ে স্বরূপে বর্তমান একটি চরিত্র। তার উপস্থিতি ও মতাদর্শ পুরো কাহিনীর অনেকগুলো অংশে মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া পরিবর্তন নিয়ে আসে। চতুর্থ হোকাগের শিষ্য ও কাকাশির বন্ধু যাকে সে একটি শারিঙ্গান চোখ দিয়ে যায় যা কাকাশিকে কপি নিনজার উপাধি এনে দেয়। সে নারুতোর মতই শৈশবে হোকাগে হবার স্বপ্ন দেখলেও ছোটবেলার প্রেম রিনকে কাকাশির হাতে মারা যেতে দেখে তার তাবৎ দুনিয়ার উপর বিতৃষ্ণা জন্মায় ও সে মাদারার অনুসারী হয়ে আকাৎসুকিতে যোগ দেয়। সেখানে সে হয়ে উঠে কাহিনীর অন্যতম খলচরিত্র। কিন্তু পরবর্তীতে তার মননের পরিবর্তনের একেকটি ধাপ অনেক আবেগী দর্শককে নাড়া দিয়ে যেতে সক্ষম। মিথ্যা শিক্ষা ও দুর্ভাগ্যের নির্মম শিকার এক অসামান্য চরিত্র এই ওবিতো।

কাকাশি হাটাকে (Hatake Kakashi) -



কোনোহা গ্রামের 'সাদা নখর'এর পুত্র ও চতুর্থ হোকাগের শিষ্য এবং সাথে নিজে ষষ্ঠ হোকাগে কপি নিনজা এই কাকাশি। একাডেমিতে সে নারুতো-সাসকে-সাকুরা (৭ নং দল) দের শিক্ষক। সাসকের প্রতি হালকা পক্ষপাতিত্ব থাকলেও নারুতো যখন ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে কাকাশি তার জন্য এক মহান শিক্ষকরূপে আবির্ভূত হয়। অসামান্য পর্যালোচনার ক্ষমতা, শারিঙ্গানের জন্য যেকোন যুৎসু নকল করে ব্যবহার করতে পারা আর সাথে ভয়াবহ নেতৃত্বদানের ক্ষমতা তাকে অনেক নিনজা থেকে করেছে আলাদা। নিয়মের প্রতি অন্ধ অনুগত হয়েও সে সহযোদ্ধাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পিছপা হয়না। পরিপূর্ণ নিনজা এবং সেই সাথে পরিপক্কও।
"In the ninja world, those who break the rules are scum, that's true, but those who abandon their friends are worse than scum."

পেইন (Pain) -

কাহিনীতে তার আদর্শগত অবস্থান খলপক্ষেই। আকাতসুকি (নতুন ভোর) দলের সংগঠক সে। দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন মূল লক্ষ্য ছিল সমগ্র বিশ্বের হানাহানি বন্ধ করে সম্প্রীতির মনোভাব সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু যুদ্ধকালে তার মা-বাবা বিরুদ্ধ পক্ষের হাতে তার সামনে নিহত হয়। এরপরে তার সঙ্গী হয় আরো দুজন একইরকম ভাগ্যাহত দুই শিশু। তিনজনের এই ছোট্ট দলটিকে বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে নিনযুৎসু শিখায় স্বঘোষিত 'কামুক সাধু' জিরাইয়া। এরপর শুরু হয় তাদের সংগ্রাম। নাগাতো চায় তার গুরুর শিক্ষানুযায়ী বিশ্বটাকে বদলে দিতে। সহমর্মিতার পৃথিবী গড়ে তুলতে। কিন্তু যতই দিন যায় সে দেখতে পায়, জীবন সবার জন্য সুবিচারক না। একটি হিংসা অপর আরেকজনের মাঝে অন্য আরেকটি হিংসার জন্ম দেয়। আবার একটি প্রতিশোধ অপরপক্ষে নতুন প্রতিশোধের জন্ম দেয়। এই অসীম চক্র ছেদ হবার নয় বলে সে গড়ে তুলে প্রচলিত হানাহানির ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি গ্রামছুট শিনোবির দল। যারা সমাজের চোখে অপরাধমূলক কাজকর্মে লিপ্ত হলেও পেইনের আদর্শ এক দিক থেকে অভেদ্য- 
"Sometimes you must hurt in order to know, fall in order to grow, lose in order to gain because life's greatest lessons are learned through pain."
তার মতে ভালবাসার কারনে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয় সেই ত্যাগ থেকে জন্ম হয় ঘৃণার। আর ঘৃণা হতেই মানুষ ব্যথাকে চিনতে পারে। আর তার ঐশ্বরিক পর্যায়ের ক্ষমতা প্রদর্শনের সময় অবিস্মরণীয় উক্তিঃ
"Justice comes from vengeance, but that justice only breeds more vengeance."

মাদারা উচিহা (Uchiha Madara) -

কোনোহা গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম হোকাগে সেঞ্জু হাশিরামার বাল্যকালীন বন্ধু এবং 'কোনোহা' নামটির প্রবক্তা মাদারা। অসাধারণ নিনজা মেধা ও রাজকীয় রক্তধারী মাদারার কাহিনী করুনা সঞ্চারী ও অধিকাংশ স্থানে চিন্তা উদ্রেককারী। অমরত্ব লাভের তৃষ্ণা আর ক্ষমতা অর্জনের লালসা এই চরিত্রকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। মূলত এই এনিমেতে তার অবস্থান মন্দের পক্ষে। কিন্তু যে আদর্শকে লালন করে তার পদচারনা সেটাকে কোন সচেতন দর্শক উড়িয়ে ফেলতে পারবে না। দুনিয়ার যাবতীয় দুঃখ-বেদনা মোচনের ইচ্ছা তার মাঝে প্রবল। সে জাগতিক উন্নতি ও শান্তি চায় কিন্তু তার জন্য সে যে পথ বেছে নেয় তা আশাবাদীর নয়। অন্ধকার জগতে বিচরন তো আছেই তার সাথে সে একনায়কত্বের প্রতিভূ। সে চায় সকল মানুষকে তার গেনযুৎসু 'অসীম চন্দ্রস্বপ্নের' ভেতরে এনে তাদের জন্য আদর্শ পৃথিবী গড়ে তুলতে। আর সেই জগতের নিয়ন্ত্রক হবে সে নিজে। তার জন্য সে কাউকে স্বীকার বা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। যেভাবে কাউকে ব্যবহার করা যায় ঠিক ততটুকু কার্যোদ্ধার হয়ে গেলে সে নির্মমতার আশ্রয় নিতে কুন্ঠাবোধ করে না। এহেন কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের জন্য সে ঘৃণিত হলেও তার পূর্বকাহিনী দেখে ফেললে তার মননের জন্য নিজের ভুলের চেয়ে পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব বেশি বলেই মনে হয়। শক্তি অর্জনের নেশা তাকে অনেক দিক থেকেই মানবিক রাখতে পারেনা। এমনকি শেষ মুহূর্তে সে এতোটাই শক্তিশালী হয়ে উঠে যে তাকে পরাস্ত করতে ঐশ্বরিক চরিত্রের আগমন ঘটে কাহিনীতে। সে জগতের হিংসা-ঘৃনা দেখে বিরক্ত এবং শুদ্ধ ভালোবাসা ও সহমর্মিতার অভাব নানাভাবে উপলব্ধি করে। তাই তার কিছু অবিস্মরণীয় উক্তিঃ
"When a man learns to love, he must bear the risk of hatred." 
সমগ্র মানবজাতির দ্বিধামুখিতার উপর বিতৃষ্ণা ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে-
"Talking about peace whilst spilling blood, it's something that only humans can do."


মাইটো গাই (Might Guy) -

'চির গেনিন' (গেনিন সর্বনিম্ন স্তরের শিনোবি) মাইটো দাই এর ছেলে। কিন্তু সে তাইযুৎসু এর সর্বোচ্চ কুশলী এবং কোনোহা গ্রামের সবুজ জন্তুদানব তাঁর ডাকনাম। সে চাকরা নিয়ন্ত্রণ করে কোন মৌলিক বস্তু ব্যবহার করতে পারে না। সে ব্যবহার করে তাঁর শরীরকে। তাঁর জীবন দর্শন শুধু পরিশ্রম ও আত্মপ্রত্যয় দিয়ে যৌবনকে ধরে রাখতে পারলে সফলকাম হওয়া অবশ্যম্ভাবী। দাই তাকে শিখিয়ে যায় 'অষ্টদ্বার' টেকনিক যা দিয়ে পানিরাষ্ট্রের 'কুয়াশায় লুকানো' গ্রামের সাতজন কিংবদন্তী তলোয়ারবাজদের চারজনকে পরাজিত করে শেষ দরজা-মৃত্যু-কে খুলে। এবং তাঁর জন্য শিক্ষা দিয়ে যায় - এই যুৎসু তখনই ব্যবহার করতে যখন তাঁর কাছে মূল্যবান কোন জীবন বাঁচাতে এর প্রয়োজন পরে। নারুতো ও সমগ্র বিশ্বকে মাদারা হতে বাঁচাতে সে সপ্তম দরজা (Gate of Shock : Blue aura of steam) খুলে হিরোদরা পাঠিয়ে শান্ত না থেকে অষ্টম দরজা বা মৃত্যুর দরজা (Red aura of blood) খুলে কোনোহার লাল জন্তু প্রদর্শন করে। 'সান্ধ্য হাতি' (সেকিজো) ও 'নিশামানব' (ইয়াগাই) দিয়ে মাইটো মাদারাকে নাজেহাল করতে সমর্থ হয় তার শেষ পর্যায়ের সময়ে। মাইটো গাইয়ের এর অসামান্য পরিবেশনা যেকোন এনিমেখোরের জন্য মারাত্মক এক টোটকা। তাঁর সাথে চরিত্রটির উদ্ভট রকমে আশাবাদী মনোভাব, সাথে শত বঞ্চনা-অবহেলা উপেক্ষা করে হতাশ না হয়ে নিজের উন্নয়নে একমনে কাজ করে যাওয়ার দৃঢ়তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সে আর তাঁর অন্ধভক্ত শিষ্য রক লি বহু হাস্যরসের সঞ্চারী দুজন চরিত্র।





এছাড়াও আরো বহু চরিত্রের সন্নিবেশনে ও প্রতিটি চরিত্রের শক্ত ঘাত-প্রতিঘাতের কল্যাণে কাহিনীটি বেশ পরিপক্কতা লাভ করেছে। উচিহা মাদারা-সেঞ্জু হাশিরামা (কাহিনীটির অন্যতম দুটি প্রধান শক্তিশালী বিপক্ষ জুটি যারা দেশগুলোর মাঝে হিংসা-হানাহানি ভুলে শিনোবিদের জন্য সুরক্ষিত গ্রাম ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল সর্বপ্রথম। কোনোহা নামটি মাদারার দেয়া কিন্তু হাশিরামা প্রথম হোকাগে ছিল এবং কাহিনীর সর্বপ্রথম ও একমাত্র প্রকৃত কাঠ ব্যবহারকারী যা মাটি ও পানির সমন্বয়ে অনন্য একটি কেক্কেই গেনকাই), প্রতিজন হোকাগে, গারা (কাজেকাগে), শিকামারু নারা, নেইজি হিউগা সহ বহু চরিত্রের আনাগোনায় মুখরিত এই এনিমে। দুঃখজনক হলেও এ কাহিনীতে নারী চরিত্র যেমন কম তার সাথে শক্তিশালী নারী থাকলেও তাদের প্রভাব ও অবদান মূল কাহিনীতে বেশ কম। তাই সুনাদে ও সাকুরা প্রচুর সময়ে কাহিনীর অংশ হলেও তাদের মূল প্রভাব হাসপাতালে ও রণাঙ্গনে আহতদের সেবায়। হিনাতা নারুতোর শৈশবকালীন প্রেমিকা হলেও তার ভালবাসা পরিণত হয় বহু পরে যেয়ে। পেইনের সাথে মারামারির সময় ছাড়া এই চরিত্রটিরও খুব একটা প্রভাব প্রধান চরিত্রের উপর পড়েনি। বিষয়টা হয়তো জাপানিজ কৃষ্টিরই একটি স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ।


সঙ্গীতঃ

মাসুদা তোশিও ও তাকানাশি ইয়াসুহারু। দুজন জাপানিজ টেলিভিশনের পরিচিত সঙ্গীত আয়োজক। তোশিও শিশুতোষ বহু টিভি সিরিজের পেছনের সঙ্গীত তৈরি করেছে । নারুতোঃ চাইল্ডহুড তার কীর্তি। আবার ইয়াসুহারু দিয়েছে শিপুদেনের মৌলিক সঙ্গীত। যেকোন ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার জন্য সঙ্গীত যেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এনিমেও তার বাইরে নয়। যেকোন মুহূর্তের প্রভাব বাড়ানোর জন্য এনিমেটেড চরিত্রগুলোর মুখাভঙ্গি পরিবর্তনের সুযোগ যেহেতু অনেক কম, তাই আবহসঙ্গীতের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়ে যায়। চরিত্রগুলোর ফ্রেমে প্রবেশ, স্বকীয় কোন উপস্থাপনা বা বক্তব্যকে আরো গুরুত্ববহ করে তুলতে আবহ সঙ্গীত নিঃসন্দেহে গভীরতা যোগ করে। আবার, কিছু ট্রেডমার্ক চরিত্রের জন্য মর্মস্পর্শী সঙ্গীতায়োজন যেমন চরিত্রকে গুরুত্ব প্রদান করে তেমনি কাহিনীর কোন চলমান অবস্থাকে করে তোলে অর্থবহ। আবেগী মুহূর্তগুলোতে প্রচুর স্ট্রিং ও কিবোর্ডের ব্যবহার আবার মারামারির সময় পারকুশনের সন্নিবেশ খুব স্বাভাবিকভাবেই শ্রোতাকে প্রকৃত দৃশ্যের কাছাকাছি নিয়ে যেতে সক্ষম। চরিত্রের আবেদন ভেদে সঙ্গীতের ভিন্নতাও উল্লেখযোগ্য। কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। নাগাতো বা পেইনের শান্ত-সৌম্য চরিত্রটিতে বহুলাংশে ব্যথা ও দুর্দশার সাথে ন্যায়পরায়ণতা ও উদারতার সম্মিলন দেখা যায়। গীর্জার আবহ আনার জন্য অরগানের ব্যবহারটাও লক্ষ্যনীয়। তার আবহসঙ্গীতটি এমনঃ গিরেই নামের ধীর স্থির ইন্সট্রুমেন্টাল।


আবার নারুতোর শক্তিশালী অবস্থা অর্জন করার সময়কার একের পর এক চমক সে সবাইকেই দিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় আবির্ভাব হবার কালে এই সঙ্গীতের সংযোজন। কুরামা মোডের জন্য এই পারকুশনসমৃদ্ধ ও দ্রুত লয়ের অ্যাড্রেনালিন জোগান দেয়া আবহগীত। এখানে বাঁশি ও কাঠের যন্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। এটি একই সাথে অনুপ্রেরণাদায়ী ও নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার বার্তাবাহী। সুরের এতোটা মসৃণ উঠা-নামা সত্যিই সুন্দর।


আবার কাহিনীর হিরোদের সংকটকালীন মুহূর্তে যখন খল চরিত্রের কেউ ভয়ানক অস্ত্র ব্যবহারে উদ্যোগী হয়ে যুদ্ধের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে উদ্যত হয় তখন বাজে এই ধীর লয়ের অশুভ ধারার এক সঙ্গীত। কোরাসের মাধ্যমে অশনি বার্তা বাহন এখানে লক্ষ্যনীয়। 



একই সাথে দুঃখবিলাসী ইটাচির জন্য বরাদ্দ হয় কিবোর্ড ও করুন রসসঞ্চারী একটি থিম। সেন-ইয়া। ধীর লয়ের সাথে যথোপযুক্ত কোরাসের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। এটার কথা উল্লেখ না করলে ইয়াসাহারুর প্রতি বেঈমানি করা হয়ে যেত।



নারুতোর আবহ সঙ্গীত ছাড়াও বহু শুরু ও শেষের গান আছে। তবে আবহ সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্য বেশ আলাদা ও সবচেয়ে বেশিবার ব্যবহার হয় দেখে এখানে আলাদা কিছু বাক্যব্যয় করলাম।


মারামারির দৃশ্য নিয়ে অতিরিক্ত কিছু বলার নেই। সাকুগা এনিমেটরদের কুশলী এনিমেশনের দরুন নারুতোর ফাইট সিকুয়েন্সগুলো পুরো এনিমে জগতের সেরাগুলোর মাঝেও অন্যতম। হিরোইউকি ইয়ামাশিতা, গরুউ সেশা, মাসাউ কোডা মূল এনিমেশনের নেতৃত্বে ছিলেন। গহীন বন উত্থান (হাশিরামার কাঠ-স্টাইল যুৎসু), সুসানুর বিভিন্ন রূপ (উচিহাদের ভিজুয়াল যুৎসু) এসব অসামান্য চিত্রায়ন এনিমেপ্রেমীদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। সেসব ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার জন্য তৎক্ষণাৎ আনন্দ ও আবেগ সঞ্চারী। একের পর এক বিভিন্ন মারামারির যুৎসু আর নিত্যনতুন উপায়ে প্রতিপক্ষ ঘায়েল করার পদ্ধতি মৌলিকভাবে সত্যিকারের যুদ্ধ হতেই নেয়া কোন সন্দেহ নেই। কেবল, পদ্ধতি ও অস্ত্রের ব্যবহার অভাবনীয়। বিশেষ করে বলতে গেলে নারুতো-পেইন এর যুদ্ধ পুরো সিরিজের অন্যতম সেরা ফাইট বলাই যায়। ফাইট চলাকালীন সময়ে আবেগের পরিবর্তন, সাথে দুই ভিন্নমুখী দর্শনানুসারীর বাক-বিতণ্ডা আর এর সাথে পুরো একটি জনপদের ভাগ্য নির্ধারন নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর।
আবার, হাশিরামা-মাদারার যুদ্ধের কথা পুরো সিরিজ জুড়ে বারাবার উচ্চারিত হলেও পুরো ফাইটের কিছু ঝলকই আমরা দেখতে পাই। কিন্তু সেটুকুও কম উপভোগ্য নয়। 
আবার সিরিজের শেষ দিকে চতুর্থ নিনজা যুদ্ধকালীন সময়ের অসংখ্য শক্তিশালী চরিত্রের প্রচুর অ্যাকশন দেখার সুযোগ হয়। কিছু ফিলার বাদ দিলে বেশির ভাগ মারামারিই মারাত্মক উপভোগ্য।
ফাইট সিনগুলো নিয়ে ভালো একটি বিশ্লেষণ এই ভিডিও থেকে হালকা বোঝা যায়।

সমালোচনাঃ

“The pleasure of criticizing takes away from us the pleasure of being moved by some very fine things.”
 Jean de La Bruyère

সমালোচনার জন্য কোন সৃষ্টিশীল আনন্দের উপভোগ্যতা কমে যায়। কথা আংশিক সত্য। নারুতোর ক্ষেত্রে বিষয়টা কিছুটা স্পর্শকাতর। সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা সেটা মনে হয় নারুতোর সমাপ্তি নিয়ে। প্রায় ৫০০ পর্বের এক ধরণের কাহিনী বিন্যাসের পর হুট করে মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া চরিত্র ও প্লট টুইস্টের অবতারনা নিতান্তই অপ্রত্যাশিত। প্লট টুইস্ট নামটাই সেজন্যে। যাই হোক, দর্শন ভাগে এটা নিয়ে হালকা বলেছি যে, ঐশ্বরিক যোগ স্থাপনের মাধ্যমে মানুষের অসহায়তা প্রসঙ্গে মর্মন্তুদ বার্তা প্রদান নির্মাতার উদ্দেশ্য হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া এতোদিন ধরে নারুতো ও সাসকের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখিয়ে হঠাৎ করে হাজার বছর আগের এক ঈশ্বর পর্যায়ের এক চরিত্র এনে দর্শকদের হতবাক করে দেয়া অনেকের কাছেই খাপছাড়া লেগেছে। শেষকালে সাসকেকে অন্ধকারের নায়ক বানিয়ে দেয়াটা আমি মনে করি পুরোপুরিভাবে সংগত। চরিত্রটা প্রথম থেকেই এমন ধারার আচরনে স্বাভাবিক ছিল। যার জন্য তার শক্তি অর্জন, তাকে হত্যা এবং শেষে তার দেখানো ও হাঁটা পথেই শেষ পর্যন্ত যাওয়া এমন এক চরিত্রের জন্য খুব সুন্দর একটি সমাপ্তি। ওবিতোর বড়কালের উপস্থিতি পুরোপুরি নাটকীয়তা দেয়া ছাড়া আর কোন কাজে লাগে নি। সে সাথে নারুতোর চিন্তার পূর্বসূরী হিসেবে কিভাবে মানুষের মানসের পরিবর্তন আসতে পারে এবং সেই সাথে সঠিক দিক নির্দেশনা পেলে সেই চিন্তাধারা যে বদলেও দেয়া যায় তার রূপায়নের প্রয়াস টোবির মাঝে প্রকট। 
আরেকটি বিরক্তিকর বিষয় হচ্ছে, অসংখ্য ফিলার পর্ব। মূল কাহিনীর ধারা থেকে সরে এসে অযথা পুরো সিরিজের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর পেছনে এনিমে চলাকালীন সময়ে স্টুডিওর পকেট ভারি করা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য বোধ করি অনুপস্থিত ছিল। কিছু ফিলার দিয়ে এনিমের মাঝে আনা অপ্রত্যাশিত চরিত্র ও কাহিনীর বিশ্লেষণ কিছু সময় দরকারি ছিল। 
কাহিনীর সমাপ্তি একটু তাড়াহুড়ো করে দিয়েছে বলে মনে হলেও তা মনে হয় পরবর্তী সিরিজ বরুতোর জন্য ক্লিফ হ্যাংগার হিসেবে রেখে দেয়াটাই স্টুডিওর লক্ষ্য ছিল।           

সর্বশেষে, এই ব্যাপক পরিসরের অসামান্য এনিমেটি কেন এনিমেপ্রেমীদের মাঝে এতটা জনপ্রিয় তার আঁচ পাওয়া গেল। অনুপ্রেরণা, দর্শন এবং সুস্থ বিনোদনের আকর এই এনিমেটেড সিরিজটি। হিরোয়িক চরিত্রগুলো শৈশব-কৈশোর পার করে ধীরে ধীরে পরিণত হয় বলে, বহু দর্শক এদের সাথে বড় হয়ে উঠে। তাই অনেকের ক্ষেত্রেই এর একেকটা চরিত্র একেকটা আবেগের জায়গা। সেজন্যেই বোধ করি আমার মত টানা দেখে যাওয়া দর্শকের কাছে এনিমেটি নিটোল একটি আর্ট ফর্ম। আবেগ-অনুভূতির কথা মাসাহি-সামার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক। নারুতো এক সুদীর্ঘ ভ্রমণ ছিল। পরম উপভোগ্যও। এত বিশাল বাক্যব্যয় করার প্ররোচনা তো এমনি এমনি আসে না! ধন্যবাদ কিছু অসামান্য চরিত্রের জন্য, ধন্যবাদ প্রচুর অনুভূতির গভীর ক্ষত তৈরির জন্য আর অবশ্যই নিটশে-সার্ত্রের যুদ্ধে সার্ত্রের পক্ষেই থাকার জন্য।

Comments