শার্টের ভাঁজ ও মানুষ সম্পর্কিত ভাবনা
নতুন একটা শার্টের ভাঁজ থাকে নিজস্ব। কেনার পর গায়ে জরানোর পর একে ধুতে হয়। নিয়মিত পরা লাগলে তো ইস্ত্রিও করা লাগে। এরপরেও ঐ নতুন কাপড়ের ভাঁজটা কিন্তু নষ্ট হয় না, যদি না তা শতভাগ সুতি হয়। বহুদিন পর্যন্ত সেই ভাঁজ ঠিক আগের মতই থাকে। এটা ঐ কাপড়ের সাক্ষর। ঐ কাপড়টার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। এতে করে যে লাভটা হয় তা হলোঃ প্রতিবার গুছিয়ে রাখার সময় কাজটা বহুগুণে সহজ হয়ে যায়।
মানুষের হয়তো এরকম নিজস্ব কিছু 'ভাঁজ' আছে। যে ভাঁজটা সে চাইলেও ভেঙ্গে ফেলতে পারে না। নতুন একটা ক্লজিটে রাখতে গেলে এর বিন্যাস-অবস্থান-প্রকার-আকার হয়তো বদলায় কিন্তু ভাঁজটা থেকে যায় আগের মতই। ব্যাগে করে ঢুকিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে চাইলে দেখা যায়, সেই ভাঁজটাই শার্টটাকে আগলে রেখেছে হাজারো কুঁচকে যাওয়ার হুমকি থেকে। এই আগলে রাখার বিষয়টা একই সাথে মানুষের জন্য হয়তো ঢাল ও তলোয়ার।
কিছুক্ষনের জন্য গায়ে চড়ালে দেখা যায় সুন্দরমতই আঁটে সাঁটে আছে। আবার গুছিয়ে রাখতে গেলে আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
আমরা, মানুষরা হয়তো এরকম কিছু ভাঁজ নিয়ে বড় হই। যখন খোলস বদলানোর সময় আসে, তখন সাময়িক একটা খোল-নলচে চাপিয়ে দিয়ে সময়টা যাবার ভান করি। এরপর আবার ভাঁজে ঢুকে যাই। আমি জানি, এটা সবার জন্য সত্য না। কেউ কেউ নিজেদের ভেতরটাসহ বদলে দিতে পারে। আবার অনেকে এরকম 'ভাঁজ' রেখে দেয়াকে 'পিউর এটেরনা' বা 'পিটার পেন সিন্ড্রোম' বলতে পারে। কিন্তু এখানে আমি আসলে সেটা বুঝাচ্ছি না। আমার 'ভাঁজ'-এর এ আলোচনা আচার-আচরণ থেকে বরং অনেকখানি মূল্যবোধ ঘেঁষা।
আমরা কীভাবে দুনিয়াটাকে দেখি। কীভাবে ভাবি। শুনতে চেষ্টা করি। এসবই আমাদের ভাঁজ।
An untitled work by David Hockney that updates the perspective of a canvas by Meindert Hobbema, a Dutch painter of the Golden Age [Source:New York Times] |
শার্টের ভাঁজটা ভেঙ্গে দিতে চাইলে শার্টের আবেদন বা দেখার সৌন্দর্য যেভাবে নষ্ট হয়, ঠিক তেমনি বা কাছাকাছিই বোধ করি, মানুষের ভাঁজটাও ভেঙ্গে গেলে তার আসল আদলটা নষ্ট হয়ে যায়। নতুন করে ভাঁজ বানাতে গেলে কিছুটা ছন্দছাড়া লাগতে পারে বা আগের ভাঁজ নষ্ট হয়ে যাওয়াতে মূল সুরটাতে ছেদ পড়ে যেতে পারে।
হয় ভাঁজ ধরে রাখাটাই শ্রেয় অথবা ঠিকঠাকভাবে ধুয়ে-কষে-পিষে ইস্ত্রি করে নতুন করে ভাঁজ করা উত্তম যাতে আগের ভাঁজ পুরোটা মিলিয়ে যায়।
দুটোই মনে হয় কঠিন।
Comments
Post a Comment